অতনু চৌধুরী (রাজু) বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ বাগেরহাট জেলায় জমজমে উঠছে ধান মাড়াইয়েে কাজ বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব দিশে হারা সমগ্র বিশ্ব। এক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো।

আমাদের দেশেও করোনা মোকাবিলায় দফায় – দফায় সাদারণ ছুটি ও লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করছেন সরকার। সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুললেও শুধু শিহ্মার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন মূল্যায়ন করে কিছুতেই শিহ্মা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি সরকার।

গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে অদ্যাবধি এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিহ্মাপ্রতিষ্ঠানগুলো। স্কুল পড়ুয়া শিহ্মার্থীদের নেই তেমন পড়ালেখার চাপ। এ অবস্থায় শিহ্মার্থীদের আগ্রহে গ্রামে – গ্রামে ভাগালো গ্রুপ গঠন করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে অনেক স্কুল পড়ুয়া শিহ্মার্থীদের।

বাগেরহাটের চিতেলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মোঃ রুবেল হোসেন, শ্রীরামপুর মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ব্যবসায় শিহ্মা শাখার শিহ্মার্থী।

বাবার আয় উর্পাজন কমে গেছে করোনার লকডাউনে। পড়া – লেখার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রুবেল হোসেন এর পরিবারের মত অনেকের পরিবার। গতবাবের ন্যায়ে এবারও ধান কাটার কাজ করেছে রুবেল’সহ অনেক শিহ্মার্থী।

ভাগালো গ্রুপের দলনায়ক মোঃ রুবেল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১২ জন স্কুলের বন্ধু মিলে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছে। তারা সকাল থেকে ধান কাটে দুপুর পর্যন্ত। দুপুরে কাটা ধান নিয়ে যায় বাড়িতে। খাওয়া দাওয়া শেষে কাটা ধান গাছের গুড়ি, তেলের বড় টিনের ড্রাম ও সিমেন্টের ঢালায়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাড়াইয়ে কাজ হয়।

বাবা ব্যাটারিত চালিত ইজিবাইক ও অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চালায় তবে লকডাউনের বিপর্যয়ে উর্পাজন নেই বললেই চলে। তাই পরিবারের সমস্যার কথা চিন্তা করে তারা বন্ধুরা মিলে ভাগালো গ্রুপ করে কৃষিকাজ করছে।

মৌসুমে প্রায় ২০-৩০ দিন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলে গড়ে প্রতিদিন মজুরি ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা করে পায় মোট ৯ -১২ হাজার টাকা আয় করে প্রতিজন। অর্জিত আয়ের কিছু টাকা সংসারের খরচ চালাতে পরিবারকে সহায়তা করে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পড়ালেখার খরচ বহন করবে।

এভাবে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সোহাগ , সুমন, নিলয়, অমৃত ও আশিক এরা ৫ জনের ভাগালো গ্রুপ করে ধান কাটছে। তারা সবাই ৮ম শ্রেণির শিহ্মার্থী। অর্জিত অর্থ দিয়ে ৮ম শ্রেনির রেজিস্ট্রেশন ফি দিবে ও বাকি অর্থ পরিবারে দিবে বলে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী অতনু চৌধুরী (রাজু) কে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব কমলেশ মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই এলাকা থেকে প্রশাসনের ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে শ্রমিককের ধান কাটতে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকাতে পাঠানো হচ্ছে বা হয়েছে জীবিকার জন্য সেহ্মেত্রে মনে করছি পরিবারের সহযোগীতার জন্য তারা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তাদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

বাগেরহাটের মোংলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে স্কুল পড়ুয়া শিহ্মার্থীদের এমন কাজ নিঃসন্দেহ ভালো উদ্যোগ। তারা কিছুটা হলেও শ্রমিকের চাহিদা পূরন করার পাশাপাশি নিজেরা আর্থিক ভালো সচ্ছল হচ্ছে। বাগেরহাট জেলায় এবছর ২৯ হাজার ১৭৫ হেক্টরের বেশি জমিতে ধানের চাষাবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এব্যাপারে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মেয়র জনাব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার থেকে তাদের উপর এমন কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে পড়ালেখা ঠিক রেখে বসে না থেকে বাবা – মাকে এভাবে সাহায্য করছে এটা খুবই ভালো। এতে তারা কিশোর গ্যাং, মাদকের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে। এভাবে ভালো কাজে লিপ্ত থাকলে তাদের মধ্যে সহমর্মিতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী অতনু চৌধুরী /মোংলা, বাগেরহাট.।